লেপচা জগৎ - ঘুম পাহাড়ের কোলে কাটিয়ে আসুন কিছুদিন

Lepcha Jagat

মুক্তির স্বাদ চাইছে মন। দৈনন্দিন জীবনের হাজারো ক্লান্তি, ব্যস্ততা, একঘেয়েমিতে  হাঁফিয়ে উঠে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে হাতছানি দিচ্ছে পাহাড়ে ঘেরা কোন এক নিরিবিলি স্থান যেখানে নিজের মত করে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসা যাবে। ব্যস্ততার মধ্যে ছুটি মেলাও এক বিশাল ব্যপার কিন্তু পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার জন্য মন যে ছটফট করছে। তাই আর দেরি না করে ব্যাগ গুছিয়ে তিন-চার দিনের জন্যে বেড়িয়ে আসতে পারেন দার্জিলিং থেকে একটু দূরেই ঘুম পাহাড়ের কোলে অবস্থিত একটি অন্যতম অফবিট ডেস্টিনেশন - লেপচা জগৎ-এ। 

ঘুম পাহাড়ের কোলে অবস্থিত লেপচা জগৎে চোখ মেললেই দেখা যাবে তুষারে আবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা আর পাইনে ঘেরা গভীর অরন্য, মনোরম সৌন্দর্যে কখন যে নিজেই নিজের মধ্যেই হারিয়ে যাবেন তা বুঝতে পারবেন না। এখানে থাকবার জন্য রয়েছে বেশ কতকগুলি হোম-স্টে। হোম-স্টে গুলিতে প্রি- বুকিংএর সুবিধা আছে। যেখানে আতিথেয়তার কোন অভাব হবে না। আন্তরিকতাপূর্ণ লেপচা জগৎে নিজেকে অতিথি বলে মনেই হবেনা, সেখানে সবাই সবার আত্মীয়। হোম- স্টে গুলি থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সুন্দর ভিউ, পাইন অরন্য ও দূরের দার্জিলিং শহরকে। হোম- স্টে ছাড়াও রয়েছে নেচার রিসোর্ট যা পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন দপ্তরের অধীনে আছে। 

কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে সানরাইসের অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য দেখে ভোর হয় লেপচা জগৎের মানুষদের ও পর্যটকদের। ভোরের মিঠে রৌদ্রজ্জ্বল দিনে, শীতের আমেজ উপভোগ করতে করতে,  এক কাপ উষ্ণ দার্জিলিং- চায়ে চুমুক দিতে দিতে, আশেপাশের ঢালু রাস্তা বরাবর  হেঁটে দুই ধারের ঘন সারি সারি পাইন বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আশেপাশে ইচ্ছেমতো বেড়ানোর সুযোগ ও আছে। গাড়ি ভাড়া করে কয়েক কিলোমিটার দূরে বেড়িয়ে আসতে পারেন তাকদা বাজার, সুখিয়াপোখরি বাজার, লামাহাটা, ছোট ও বড়ো মাঙ্গয়া, তিনচুল ও দার্জিলিং থেকে। 

সাধারনত অক্টোবর- নভেম্বর মাস এই স্থানে ভ্রমনের জন্য আদর্শ সময়। বর্ষার অপরূপ দৃশ্য যা অবর্ণনীয়, তবে এই সময় জোঁকের দেখা মেলে তাই জোঁক থেকে সাবধান। এই স্থানে খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে যায় ও চারিদিকে শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক যা এক গ্রাম্য, নিঝুম পরিবেশের সূচনা করে। প্রিয় মানুষের সাথে কিছুটা সময় এখানে কাটাতে পারলে মুহূর্তের মধ্যেই মন ভালো হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় পাহাড় প্রেমীদের কাছে সূর্য ডোবার সৌন্দর্য যে কতটা দৃশ্যময় তা বলে বর্ণনা করা যাবে না। কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় সূর্যাস্তের সময় যে আলোর ছটা দেখতে পাওয়া যায় তা পর্যটককে মুগ্ধ করে। লেপচায় সন্ধ্যে নামলে আলোকিত দার্জিলিং শহরটিকে হীরের মতো জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়। তবে সন্ধ্যার পর হাঁটা পথে বেশিদূর যাবেন না, স্থানীয় মানুষেরা বলেন সন্ধ্যের পর সেখানে রয়েছে লেপার্ডের ভয়। 



লেপচা জগৎের এই সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে করতে অল্প কিছুক্ষনের জার্নি করে ঘুরে আসতে পারেন নেপাল বর্ডারে যা সীমানা নামে পরিচিত। তবে এই সীমানায় যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের কোন প্রয়োজন নেই। বছরের বারোটি মাসেই এখানে চলে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা, এইসব অপরূপ দৃশ্যই ভ্রমনপিপাসু ব্যক্তিদের ভ্রমন-পিপাসাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।রকমারি জিনিসপত্র, ঘর সাজাবার সুন্দর সুন্দর উপকরন, নেপালি চা- বাগান,  নেপালি  চকলেট মনকে মুগ্ধ করে দেবে। এই মুগ্ধতাকে সঙ্গী করে ঘুরে আসুন জোড়পোখরি। জোড়পোখরি অভয়ারন্যের অন্যতম আকর্ষণ এক বিলুপ্তিপ্রায় টিকটিকি প্রজাতি যা সালামান্ডার নামে পরিচিত। 

হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গগামী যেকোন ট্রেনে চেপে পৌঁছে যেতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। সেখান থেকে পেয়ে যাবেন শেয়ার গাড়ি অথবা রিজার্ভ গাড়ি। রিসার্ভ গাড়ি একেবারে আপনাকে পৌঁছে দেবে লেপচা জগৎে। ছোট রিজার্ভ গাড়ির ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা ও বড়ো রিজার্ভ গাড়ির ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। শেয়ার গাড়িতে প্রথমে নামতে হবে ঘুম স্টেশনে, জনপ্রতি ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এরপর আবার একটি শেয়ার গাড়িতে উঠে পৌঁছে যাওয়া যাবে লেপচা জগতে, জনপ্রতি খরচ পরবে ৫০ টাকার মধ্যে। বাজেটের দিক থেকে যেমন এই স্থান খুবই সাশ্রয়ী তেমনি হোম-স্টে গুলিতে থাকা ও খাবারের খরচ খুব বেশি নয়। অফ সিজনে খরচ একদমই অল্প। পূজোর সময়টা পিক সিজন তাই খরচ অল্প বেশি যদিও ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা সমেত পেয়ে যাবেন হোম-স্টে গুলি।  হাতের নাগালে পেয়ে যাবেন দোকানপত্র, যেখান থেকে মন ভরে পরিবারের সকলের জন্য জিনিস কিনতে পারেন। তাই অল্প খরচে রোজকারের একঘেয়েমি, ক্লান্তি কাটাতে চলে আসুন ঘুম পাহাড়ের কোলে অবস্থিত লেপচা জগৎে যা সোলো ট্রিপের এক অনন্য স্থান। 

Image Credit:- Book My Cheap Hotel


লেখক পরিচিতি

নাম: সোমশ্রী দত্ত

সোমশ্রী দত্ত (জন্ম - ০৫.০১.১৯৯৩)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। পেশায় সাউথ পায়োনিয়ার অ্যাাকাডেমি স্কুলের শিক্ষীকা।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্ট

কেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে? - সিমন রায়

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় – কেন এত জনপ্রিয় ছিলেন

বাংলার দারুশিল্প - এক অনালোচিত অবহেলিত শিল্পকর্ম - সোমশ্রী দত্ত